নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ৩৫০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনায় এসেছিলেন এক গার্মেন্ট কর্মী। নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, মাকে দেখার জন্যই তিনি সাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনায় গিয়েছিলেন। তিনি আসার সময় সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।
ওই ব্যক্তি আসার পথে যেসব জায়গায় থেমেছিলেন এবং যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ট্রেস ম্যাপ তৈরি করে বরগুনা স্বাস্থ্য বিভাগ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠিয়েছে।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘এত পথ করোনাভাইরাস বহন করে বরগুনায় আসায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি ও সংস্পর্শে আসা লোকজনকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় সাইকেল চালিয়ে ১০ এপ্রিল তিনি ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা করেন। পোস্তাগোলা ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের একটি স্থানে হোটেলে দুপুরের খাবার খান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে মাওয়া পৌঁছে নামাজ পড়েন তিনি। এরপর মাওয়া ফেরিঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওনা হন। মাঝপথে তিনি টেকেরহাটে যাত্রা বিরতি করেন। পরে ১১ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে বরগুনা পৌঁছান। তিনি ঢলুয়া ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসায় রাত্রি যাপন করেন। ১২ এপ্রিল সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে লেমুয়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাকে বরগুনা সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠালে ১৪ এপ্রিল তিনি করোনা আক্রান্ত হয় বলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন।
ওই শ্রমিক বলেন, ‘আমি মাকে দেখতে ঢাকা থেকে বরগুনা রওনা দেই। যেহেতু লকডাউন চলছে তাই বাস বা লঞ্চের পরিবর্তে আমি সাইকেল চালিয়ে বরগুনা আসি। আমার স্ত্রী-সন্তানরা এখনও ঢাকায়। ডাক্তারি পরীক্ষায় আমার করোনা ধরা পড়েছে ঠিকই। কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।’ তার স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী সুস্থ শরীরে আমার শাশুড়িকে দেখতে গিয়েছিলেন। অথচ পত্র-পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে আমি তাকে ঘরে উঠতে দেইনি। বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। কে বা কারা আমার ও আমার স্বামীর নামে এসব গুজব ছড়িয়েছে আমি জানি না।’
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বলেন, ওই ব্যক্তি বরগুনায় আসার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় তাকে প্রথমে লেমুয়াতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে আসি। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখানে তিনি যেসব জায়গায় গিয়েছিল সেসব জায়গা আমরা লকডাউন করে দিয়েছি।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তক্তাবধায়ক ডা. সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা ওই ব্যক্তি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তিনি যেভাবে ঢাকা থেকে বরগুনা এসেছেন যার যার সংস্পর্শে এসেছেন সবকিছু তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা তথ্য নিয়ে আইইডিসিআরে পাঠিয়েছি।’
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বশুরবাড়ি এবং এর আশেপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের বিষয়েও স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply